সামসুল হকের কবিতা
|
৩ পৌষ ১৪২২ |
Thursday, December 17, 2015
কেমন করে যেন পশ্চিম বাংলার এই ষাট দশকের অন্যতম কবি হারিয়ে গেলেন—তা বাংলা কবিতার পাঠকরা জানতেও পারলেন না। একমাত্র যিনি বলতে পারতেন, বক্রোক্তি করতে পারতেন—তিনি এখন কাকদ্বীপে অচেনার দেশে নিশ্চুপ হয়ে আছেন, এখন আর কোনো কথা বলেন না, তাঁর অনুরাগীদের মেজাজ ও অভদ্র আচরণ দিয়ে বিস্মিত করেন না। দরজার সামনে ‘প্রবেশ নিষেধ’ ঝুলিয়ে রাখেন না। কিন্তু ‘একুশ’টা কাব্যগ্রন্থ আমাদের সামনে, ধুলোয়, অজানায়, পড়ে আছে।
তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ ও মূল্যায়ন গদ্য ছাপা হচ্ছে শিগগিরই। আজ শুধু কবিতা।
খুনি
খুনিও কবিতা লেখে হঠাৎ-ই সে লেখে
‘সে কেন জলের মতো ঘুরে-ঘুরে একা কথা কয়!’
জীবনানন্দের এই লাইনটি তুমি কেন লিখলে আবার
শুনে খুনি ঝড়ের ভিতর থেকে আন্তরিক বিস্মিত হয়েছে
ঝড়েরও বিস্ময় ছিলো
সে কেন খুনিকে দিলো চৌকোনীল উন্মত্ত স্তব্ধতা
সে কেন খুনিকে দিলো
নীল ভোর
কাঁচা আর
কিশোরীর প্রথম আঁচল
খুনিতো কবিতা লেখে
বলেছিলো অন্য-এক খুনি
শুনেছিলো অন্য-এক খুনি
যে প্রতিরাত্রেই তার কবরের শূন্য থেকে উঠে এসে
খুন করে কিশোর কবিকে
পিঁপড়ে আর মাছির আপনজন
‘ক’-হাতে ‘খ’-এর একজন খুন
তার নাম : খ-০০৫/১৪(৭০)
‘ক’-এর তৃপ্তি, ‘খ’-এর শোক-রাগ,
‘ক’-এর শত্রু খতম, ‘খ’-এর কথায়—শহিদ
ফলে, মিছিল, শোক-মিছিল, ক্রোধ-মিছিল, মালা ইত্যাদি
‘খ’-এর হাতে ‘ক’-এর একজন খুন,
তার নাম : ক-২০.০১৩(৪৭)
‘খ’-এর টেবিলে, পেপার-ওয়েটে উল্লাস,
‘ক’-এর ক্যালেন্ডারে কালো অক্ষরের দিন
ফলে, মিছিল, শোক-মিছিল, ক্রোধ-মিছিল, মালা ইত্যাদি
‘ক’-এর হাতে ‘ক’-এর একজন খুন,
ঠিকঠিক শব্দটি : শেষ-নিশ্বাস ত্যাগ,
‘খ’ অনবহিত, ইনডিফরেন্ট
‘ক’ প্রাত্যহিক কাজে ব্যস্ত
সবাই তৃপ্তিহীন, ক্রোধহীন,
লাশটার উপর পিঁপড়ের আর মাছির কোনো অবহেলা নেই।
ট্রেন যায়
কোথায় কিসের শব্দ— হয়তো ট্রেনের শব্দ যায়,—
বুঝি সারা কামরা জুড়ে চৈতন্য ভীষণ একা-একা,
পাহাড়তলির পথে ট্রেন যায়; শব্দ চলে যায়:
শব্দ কতোদূর যায়?— বাবা-মার শৈবাল-সত্তার?
ট্রেন যায়, অন্ধকার, তোমাকে স্বীকার করে নিয়ে;
ব্রিজের উপর দিয়ে চলার সময় ছায়া নেই—
শব্দ যায়, ভালোবাসা, তোমাকে স্বীকার করে নিয়ে…
ট্রেন ক্রমাগত যায়, স্টেশন কোথাও ছিলো না।