জুয়েলারী জগতে আলোচনার কেদ্রবিন্দুতে “ডায়মন্ড সিটি” কেবিন ক্রূ/ ফ্লাইট স্টুয়ার্ড নেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স (ছেলেমেয়ে উভয়ই) বিনা অভিজ্ঞতায় “কেবিন ক্রু” পদে লোক নিবে নভো এয়ারলাইন্স, যোগ্যতা HSC, আবেদন করতে পারবে ছেলে মেয়ে উভয়ই। অচেনা নায়ক ! Unseen Hero !! কেবিন ক্রু নিয়োগ দেবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ,যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক ,আবেদন করতে পারবে ছেলে মেয়ে উভয়ই বিনা অভিজ্ঞতায় “কেবিন ক্রু” পদে চাকরি, যোগ্যতা HSC পাশ, বেতন ৮০০০০ টাকা ইউএস-বাংলার বহরে নতুন বোয়িং যুক্ত ‘চাকরির হতাশায়’ ঢাবি গ্রাজুয়েটের আত্মহত্যা ! নতুন ৫ টিভি চ্যানেলের অনুমোদন , মিডিয়াতে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ জবস এওয়ানের এক যুগ পূর্তি
ঢাকা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, স্থানীয় সময়: ০৮:৫০:২৮

বিদেশে কোনো প্রশ্ন নেই তাই অর্থপাচার

| ২৭ অগ্রহায়ন ১৪২২ | Friday, December 11, 2015

এ অঞ্চলে যখন কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয় তখন চাঞ্চল্য আসে দুবাইয়ের অর্থনীতিতে। ভারত, পাকিস্তানের মতো দেশগুলো থেকে ধনীরা অর্থ সরাতে থাকে সেখানে। টাকা কোথা থেকে এলো, কী কাজে খরচ হবে—এসব প্রশ্ন করে না দুবাই সরকার। এমনকি আয়ের ওপর কোনো করও নেই। বরং বিদেশিদের জন্য সেখানে সম্পত্তি কেনা খুবই সহজ। দুবাইয়ে বিদেশি অর্থের আগমন শুরু হয়েছিল সত্তরের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান দখলের পর। সে দেশের ধনী ব্যবসায়ীরা তখন অর্থ নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে যান। এতে দুবাইয়ের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এর পর থেকেই বিদেশি অর্থের প্রবাহ নিশ্চিত করার নীতি গ্রহণ করে আমিরাত সরকার। এখন আবাসন ব্যবসা, অবৈধ অর্থ ও অপরাধীদের তীর্থক্ষেত্র দুবাই। পাকিস্তান ও ভারতের ধনী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলারা বহুদিন ধরেই সেখানে তাঁদের অর্থ নিরাপদে রাখছেন। এখন বাংলাদেশিরাও তাঁদের অনুসারী হচ্ছে।

২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে যে ৭৬ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে তার গন্তব্য উল্লেখ করেনি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই)। তবে ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্ক বলেছে, বাংলাদেশের কাছের কয়েকটি দেশই টাকা পাচারের ভালো জায়গা। এর মধ্যে আছে সিঙ্গাপুর, হংকং ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। সুইজারল্যান্ডে বিপুল টাকা থাকার খবর ও মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের তথ্য ওই দুটি দেশই জানিয়েছে। অন্যদিকে প্রবাসীদের মাধ্যমে জানা গেছে কানাডা ও আমেরিকায় বাংলাদেশিরা এখন প্রচুর সম্পত্তির মালিক। কানাডায় বাংলাদেশিদের একটি পাড়াই আছে। ওই সব দেশ বিদেশি অর্থের প্রবাহ টানতে ব্যাংকিং খাতে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখে। প্রভাবশালী দেশগুলোর সরকার চাইলেও তারা গ্রাহকের তথ্য জানাতে চায় না। বাংলাদেশের মতো দেশগুলো তথ্য চাইলে তারা সাড়াই দেয় না। এ ছাড়া সেখানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও নানা সুবিধা আছে। কর ছাড়, নাগরিকত্ব, সহজে সম্পত্তি কেনার সুযোগ, বিভিন্ন মুদ্রায় অর্থ জমা রাখা ও মুদ্রা পরিবর্তনের সুযোগ দিয়ে ওই সব দেশ নিজেদের অবৈধ অর্থের স্বর্গ বানিয়ে রেখেছে। ফলে এ অঞ্চল এবং ধনী দেশগুলো থেকে অর্থ পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে ওই সব দেশের ব্যাংকে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের আগ্রহ কমেছে : ২০০২ সালে চালু হওয়া মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পে তিন হাজার ৯৭ জন বাংলাদেশি অংশ নিয়েছে। এতে পাচার হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এটা কেবল ওই প্রকল্পে অংশ নেওয়ার খরচ। সেখানে স্থাবর সম্পত্তি কিনতে কত টাকা বাংলাদেশিরা ব্যয় করেছে, তার হিসাব দেয়নি মালয়েশীয় সরকার। সেকেন্ড হোম প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীরা সেখানে স্থাবর সম্পদ কিনতে চাইলে, প্রত্যেককে কমপক্ষে ১০ লাখ রিংগিত বা দুই কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে। তবে চলতি বছর সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি বাংলাদেশিরা। ওই প্রকল্পে বিনিয়োগকারীদের ওপর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরদারির খবর আসে গণমাধ্যমে। এমনকি দুদক জানিয়েছিল, তথ্য যাচাইয়ের জন্য মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ একটি সমঝোতা চুক্তি করবে। ২০১২ সালে ওই প্রকল্পে ৩৮৮ জন বাংলাদেশি বিনিয়োগ করেছিল। ২০১৩ সালে তা দাঁড়ায় ২৮৫ ও ২০১৪ সালে ২৫০ জনে। চলতি বছর আগস্ট মাস পর্যন্ত ৯২ জন বাংলাদেশি সেকেন্ড হোম প্রকল্পে অংশ নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে ওই প্রকল্পের ওয়েবসাইটে।

স্বর্গ এখন হংকং, সিঙ্গাপুর ও দুবাই : বাংলাদেশ থেকে টাকা কোন দেশে বেশি যায় তা নিয়ে কোনো সংস্থার কোনো প্রতিবেদন নেই। তবে ধারণা করা হয়, এ টাকার একটা বড় অংশ এখন সিঙ্গাপুর, দুবাই ও হংকংয়ে আছে। বড় কম্পানি ও ব্যবসায়ীরা তাঁদের টাকা ওই সব দেশে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ওই সব দেশে ব্যাংকিং সহজ ও কঠোর গোপনীয়। তবে রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীরা ব্যক্তিগত অর্থ বিনিয়োগের জন্য আমেরিকা, কানাডা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াকে বেছে নেন। কারণ ওই সব দেশে সম্পত্তি কেনা একেবারেই সহজ। তবে সব দেশের অর্থের পুরনো গন্তব্য সুইজারল্যান্ড তার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। গত বছর সুইস ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, সেখানে বাংলাদেশিদের তিন হাজার ২৩৬ কোটি টাকা গচ্ছিত আছে। ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের ‘ফাইন্যানশিয়াল সিক্রেসি ইনডেক্স-২০১৫’ (আর্থিক গোপনীয়তা সূচক)-এ প্রথম দশটি দেশের মধ্যে প্রথমে আছে সুইজারল্যান্ড। এর পরের অবস্থানগুলোতে আছে হংকং (২), যুক্তরাষ্ট্র (৩), সিঙ্গাপুর (৪), জার্মানি (৮), বাহরাইন (৯) ও আরব আমিরাত (১০)। এসব দেশে বাংলাদেশের ব্যবসা আছে, বাংলাদেশিদের যাতায়াত আছে। তাই মনে করা হয়, গত দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া চার লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকার সিংহভাগ এসব দেশেই আছে। কিন্তু সরকার চাইলেও তা ফিরিয়ে আনা কঠিন। সুইস ব্যাংক নামে পরিচিত সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো বাংলাদেশের সাধারণ ব্যাংকগুলোর মতোই। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থা যেমন চিঠি দিলেই গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবের তথ্য পায়, সুইজারল্যান্ডে তা কখনোই সম্ভব নয়। গ্রাহকের গোপনীয়তাকে সে দেশে চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর গোপনীয়তার সমান মর্যাদা দিয়ে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আরো বেশি গোপনীয়তার জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গ্রাহকের নাম ব্যবহার না করে শুধু সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। সে সংখ্যাটি শুধু গ্রাহক আর ব্যাংকের ওপরের স্তরের কয়েকজন কর্মকর্তার জানা থাকে। ফলে অসৎ রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীরা টাকা রাখতে পছন্দ করেন সুইস ব্যাংকগুলোতে। কঠোর গোপনীয়তার পাশাপাশি হংকংয়ে বিদেশিদের জমা টাকার আয়ের ওপর কোনো কর নেই। কর দিতে হয় শুধু স্থানীয়দের। বিভিন্ন দেশের মুদ্রায় সেখানে অর্থ জমা রাখা যায়। এমনকি কেউ চাইলে ইচ্ছেমতো দ্রুত মুদ্রা পরিবর্তন করতে পারেন। সঞ্চয়ী হিসাবে টাকার বদলে সোনাও জমা রাখা যায়। হংকং তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক তথ্য ভাগাভাগির চুক্তি এড়িয়ে যাচ্ছে। গত এক দশক ধরে সিঙ্গাপুর কঠোর গোপনীয়তার নীতি মেনে চললেও সম্প্রতি বৈশ্বিক চাপে কিছু ছাড় দিচ্ছে। সেখানকার সরকার ব্যাংকিং আইনে একটি ধারা সংযুক্ত করেছে, যেখানে কোনো দেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থা চাইলে তথ্য প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে সেই তথ্য পেতে টাকা পাচার ও কর ফাঁকির শক্ত প্রমাণ থাকতে হবে। বাড়ি কেনা সহজ কানাডা ও আমেরিকায় : কানাডায় নাগরিকত্ব ছাড়াই বছরে ছয় মাস বসবাস করা যায়। এ জন্য ব্যাংক হিসাব খোলা ও বাড়ি কেনার সুযোগ দেওয়া হয়। চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে বাড়ি কেনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কানাডার কিছু ব্যাংক অর্থ পাঠাতে সহায়তা করছে বলে একাধিক অভিযোগ আছে। বাংলাদেশিরা কানাডায় বেগমপাড়া নামে একটি এলাকা গড়ে তুলেছে। সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশিদের মধ্যে ভেদাভেদ করে না কানাডা সরকার। আমেরিকায়ও সম্পত্তি কেনা সহজ। সেখানে প্রচুর বাংলাদেশি আছে। ফলে এদেশ থেকে টাকা পাঠিয়ে স্বজনদের নামে বা নিজ নামেও বাড়ি কিনতে পারে টাকা পাচারকারীরা। সম্প্রতি আমেরিকার আবাসন খাতে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ বেড়েছে বলে জানিয়েছে প্রবাসীরা। 

সূত্র : কালের কন্ঠ